‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ প্রবাদটি কারো অজানা নয়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রাজ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা আমাদেরকে প্রবাদ বাক্যটির অর্থ মরমে মনে করিয়ে দেয়।আর এর সত্যতা সম্পর্কেও কারো দ্বিমত নেই। ষড়রিপুর মধ্যে লোভ অন্যতম। লোভ হলো কোনো কিছু পাওয়ার উদগ্র কামনা বা প্রবল বাসনা। অতিরিক্ত প্রলুদ্ধতাই লোভ, যা দোষনীয়। তা মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বোধ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান বিলুপ্ত করে। লোভ-লালসা তাই সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাগ করা উচিত। কিন্তু আমরা তা অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে পরিহার করলেও মনে মনে লালন পালন করে চলি। অতিরিক্ত চাহিদা আর সুখের অন্বেষণেই লোভ-লালসা বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
লোভের মধ্যে অর্থলোভ সেরা। অর্থলোভ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অর্থ ছাড়া জীবন অচল ঠিকই। জীবন- ধারণের জন্যেও অর্থের অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। সুখ-শান্তি, মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ঐশ্বর্য-নিরাপত্তা ইত্যাদির জন্য অর্থের চাহিদা নিয়েই আমাদের যত উদগ্রীবতা। তবে অবশ্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা ও অর্থের লোভ এক নয়। প্রয়োজনীয়তা বলতে বোঝায়, যা না হলেই নয়। এর অধিক প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা লোভের পর্যায়ভুক্ত। লোভ প্রয়োজনের পরিধি প্রসারিত করে, সীমালংঘনে প্ররোচণা যোগায়। তখন অর্থলোভ পরিণত হয় অনর্থের কারণে।
দুনিয়ায় বিভিন্ন রকমের অপকর্ম, পাপ ও অপরাধের কারণও অর্থ। অর্থলিপ্সা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। যার মধ্যে অর্থলিপ্সা প্রবল, তার পক্ষে এহেন অন্যায়, অবিচার, দূরাচার ও দুষ্কর্ম নেই, যা করা সম্ভব নয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, জুয়া, প্রতারণা, মাদককারবার প্রভৃতির কারণ অর্থলোভ। যাবতীয় অনর্থের অন্যতম কারণ যেহেতু অর্থলিপ্সা, তাই কবি গুরুর কথায় :এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়/আছে যার ভূরি ভূরি/ রাজার হস্ত করে সমস্ত/ কাঙালের ধন চুরি।
