Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

আচ্ছা, নদী তুমি কি কান্নাকাটি করো? তোমার বুকে কষ্ট হয়? দিনশেষে, কেউ কি এসে জিঙ্গাসা করে, তুমি কেমন আছো? হয়তো, করে না! অথচ কত ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে আজকের সমাজ- সভ‍্যতা তোমার তীরেই গড়ে উঠেছে, সেই সভ‍্যতার ধারকও তুমি, বাহকও তুমি! এক কথায় তুমি আশ্রয়দাতা! এখন হরপ্পা, মহেনঞ্জোদারোকে ডেকে জিঞ্জাসা করলে, ওরাও বলবে যে, আমরাও নদীর তীরের গড়ে উঠেছিলাম। আজ তারা মৃত! ও নদী, তাদের মৃত আত্মা কি, এসে তোমার সাথে খুনসুটি করে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি একলা কেমন আছো? প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাতে রক্তাক্ত হয়ে, বছরের পর বছর একইভাবে বয়ে চলেছো, কী অদম্য তোমার শক্তি, দুঃসাহসী তোমার মনোবল, পাহাড়কে ছেদ করে বয়ে চলেছো, এইজন্যই বুঝি তুমি নদী! কত চোখের জল মুছিয়েছো, চাষীর মুখে ফুটিয়েছো হাসি, তবু তোমার কাঁদতে মানা কারণ তুমি যে নদী।

ঠিক এমনি, সমাজের খেটে-খাওয়া মজুর, চাষী ও কারিগরদের অবস্থা। প্রতিদিন জীবনযুদ্ধের লবণাক্ত জল, মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝড়িয়ে, প্রতিনিহত নিজেরা ভাঙছে; তবুও সমাজ গঠনের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখছে না! এই সকল মানুষগুলোর কষ্ট, গায়ে ঘাম-সিক্ত মনের অনূভুতি গুলো সবাই সমানভাবে ভেবে দেখে না, তাইতো একাধিক সময়ে সেটা রাজপথে হোক বা মাঠে-ঘাটে, এই সকল মানুষগুলোকে অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে! দেশভাগের সময় দেখা গেছে; দুর্ভিক্ষের সময় অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে; করোনা অতিমারির প্রাক্কালে অসহায় ভাবে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেছে, এইসব খেটে-খাওয়া মানুষ গুলো। এখন আসি, এদের স্বপ্নের কথায়, এদেরও তো কিছু স্বপ্ন থাকে! থাক না পকেটে টাকার টান! তাই বলে কি, এদের পরিশ্রম বৃথা যাবে! এদের সন্তান-সন্ততিরা একটু ভালোভাবে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বাঁচবে না! রাজ‍্য তথা গোটা দেশের আকাশে,বাতাসে দুটি শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে সমাজ গঠনের নামে ‘দুর্নীতি’ আর ‘বেকারত্ব’, সমাধান করে যে-দুটিকে আকাশ-বাতাস থেকে সরানো যাচ্ছে না! তাহলে কী হবে? এই সকল মানুষগুলো কি কোনো দিন একটু সুখের মুখ দেখবে না? এরা কি চিরকাল নদীর মতোই মুখ বুঝে সবটাই সয়ে যাবে? এদের কথা কেউ ভাববে না! শিক্ষিত বেকারদের বেকারত্ব দূরীকরণের দাবিতে রাজপথে দেখা গেলেও সমগ্র বুদ্ধিজীবী সমাজকে প্রতিবাদের ভাষায় রাজপথে দেখা আর যায় না! তাই হয়তো আমাদের সকলকে একটু ভাবতে হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.