নিজস্ব সংবাদদাতা: একদিকে প্রকৃতির মার, অন্যদিকে মানুষের অত্যাচারে আরামবাগের চাঁদুরে অবস্থিত ফরেস্ট আজ ধ্বংসের মুখে। এমনিতেই দ্বারকেশ্বর নদীর পাড় ভেঙে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে এই ফরেস্টের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা , চোরা শিকারিদের হাতে চুরি হয়ে যায় গাছের পর গাছ, জঙ্গল সাফ করে জমি মাটি দখল হচ্ছে, বসতি তৈরী হয়েছে। ফলে এই ফরেস্টের আয়তন অনেকটাই কমে গেছে। এরপর পিকনিকের নামে যেভাবে তারস্বরে ডিজে বক্স বাজিয়ে, আগুন জ্বেলে পিকনিক চলে, পিকনিক শেষে ফেলে যাওয়া আবর্জনার স্তুপ যত্রতত্র পড়ে থাকে, তাতে ফরেস্টের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনভূমি। এই বনভূমিকে রক্ষা করতে এবার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এই ফরেস্টের বিট অফিসার আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, চাঁদুর ফরেস্ট সংরক্ষিত এলাকা। নিয়মানুযায়ী এখানে বিনা অনুমতিতে পিকনিক করা যায়না। এবার থেকে পিকনিক করতে হলে চাঁদুর ফরেস্ট থেকে লিখিত আবেদন করে আগাম অনুমতি নিতে হবে। তিনি জানান, দ্বারকেশ্বর নদের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে এই সংরক্ষিত বনভূমি, পশ্চিম পাড়ের বনভূমি গোঘাট থানা এলাকায় অবস্থিত। পূর্ব পাড়ে চাঁদুর ফরেস্টের মধ্যে কিছুটা আরামবাগ থানার মধ্যে পড়ে। বাকি অংশ পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার মধ্যে বিস্তৃত। মুলত শাল, শিশু, সোনাঝুরি, শিরিষ গাছ নিয়ে বিস্তৃত এই বনভূমি। সবুজ শুধু সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নয়, সুস্থ জীবনের অঙ্গ, বিশুদ্ধ বাতাস বহন করে। কিন্তু নদীর পাড়ে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে তলিয়ে গেছে এই ফরেস্টের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা, দীর্ঘ বছর ধরে বন কেটে কেটে ফরেস্টের জমি দখল হয়ে গিয়েছে। এর জেরে এই বনভূমি ছোট হতে হতে এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। এরপর শীতকালীন পিকনিক, দীর্ঘ বছর ধরে চুড়ান্ত বেনিয়মের মধ্যে এখানে পিকনিকের নামে যথেচ্ছাচার হয়ে চলেছে। এভাবে চলতে পারে না। আরামবাগ ফরেস্ট রেঞ্জের অফিসাররা এখন থেকে এই পিকনিকের ক্ষেত্রে লাগাম টেনে দিয়েছেন। লিখিত আবেদন করতে হবে, অনুমতি মিললে তবেই পিকনিক করা যাবে। এ বিষয়ে স্নেক এন্ড এনিমেল রিলিফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর অন্যতম ব্যাক্তিত্ব মঙ্গল সাউ, যিনি একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে নানান কাজ করছেন, তিনি জানান, শীতের মরসুমে এখানে পিকনিকের নামে যেভাবে তারস্বরে ডিজে বক্স বাজিয়ে আগুন জ্বেলে পিকনিক করা হয় তাতে শুধু জঙ্গলের ক্ষতি হয় তাই নয়, এখানে থাকা হনুমান, শিয়াল, পাখি, খরগোশ জঙ্গল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়, বহু পোকামাকড় মারা যায়। এভাবে চলতে থাকলে এই বনভূমিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না, জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, এখনই সজাগ হওয়া প্রয়োজন। ফরেস্ট রেঞ্জার্স হিসেবে এখানে যারা কর্মরত আছেন তাঁদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। এ বিষয়ে পৌর প্রধান সমীর ভান্ডারী সহমত পোষণ করে বলেন, এই ফরেস্টের অনেকটা অংশ তাঁর নিজের ১৬ নং ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত। তিনি মনে করেন এই বনভূমি আরামবাগের ফুসফুস। একে রক্ষা করতে চাঁদুর ফরেস্টের বিট অফিসার আশরাফুল ইসলাম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাকে তিনি পুর্ন সমর্থন ও সাধুবাদ জানান।