Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

নিজস্ব সংবাদদাতা: শিক্ষায় বৈষম্য নয়, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার “তরুনের স্বপ্ন” প্রকল্প চালু করেছে। করোনা কালীন অনলাইন পঠনপাঠনের সুবিধার্থে সরকার এই প্রকল্প চালু করে। দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের হাতে সরকার তখন থেকেই ১০ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্ট ফোন তুলে দেয়া শুরু করে। এবারো রাজ্যের অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে আরামবাগ মহকুমাতেও প্রায় ১১ হাজার ৬৬৮ জন দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের একাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকা মূল্যের ট্যাব কেনার টাকা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার বলছে এতে নাকি বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত ছাত্রীরা ভীষণ ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। বলা হচ্ছে, এই স্মার্টফোন পাওয়ায় ছাত্র ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগাযোগ করা, অনলাইন নোটিশ বোর্ড দেখা, পাঠ্যপুস্তকের কোনো বিষয়ে কোনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ জানার জন্য স্যারদের সাথে মোবাইল চ্যাট, ভিডিও চ্যাট করে জেনে নেয়ার সুযোগ সুবিধা পেতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে আরামবাগ মহকুমা শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক বৃন্দাবন ধাড়া জানান, আরামবাগ মহকুমার ১৫ টি চক্রে ১১৫ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ১১,৬৬৮ জন ছাত্র ছাত্রীর একাউন্টে সরাসরি স্মার্টফোন কেনার টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক অভিভাবক যেমন এই স্মার্টফোন পাওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে সরকারি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, অন্যদিকে অনেক অভিভাবক বিরক্ত প্রকাশও করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এখন ৯০ ভাগ মানুষের হাতে স্মার্টফোন আছে। সন্তানদের হাতে মোবাইল তুলে না দিলে পারিবারিক শান্তি বিঘ্নিত হয়, কি শহর, কি মফস্বল শহর বা গ্রাম, আর কিছু না হোক, মোবাইল চাইই। অনলাইনে কটা ছেলে মেয়ে ক্লাশ করে? টিউটোরিয়াল হোমে চাটায় উপচে পড়া ভিড়, ব্যাচের পর ব্যাচে শিক্ষকরা টিউশুনি ব্যবসা ফেঁদে রেখেছেন। শুধু নোট সাপ্লাই আর জেরক্সের পর জেরক্স করে নোট সংগ্রহ করা চলে। বিদ্যালয়ে মোটা অংকের ফিজ, মোটা অংকের টাকায় অসংখ্য পাঠ্য বই কেনা এরপর সরকার স্মার্টফোন কেনার টাকা দিয়ে দিচ্ছে, তার নেট রিচার্জ করার বিপুল অঙ্কের টাকা। সামান্য রোজগারে শুধু ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্যই অর্ধেক উপার্জনের টাকা ব্যয় হয়ে যায়, জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া, সাধারণ বিত্তের অভিভাকদের যন্ত্রনা সরকার বুঝবে না আদৌ বুঝতে চায়! তাঁরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা মোবাইলে পড়াশোনা কতটা করে সন্দেহ আছে, গেম খেলা, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, চ্যাট মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে কিশোর বয়সী ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে। অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। কিসের প্রয়োজন এসব দিয়ে কিশোর মনকে প্রলুব্ধ করা? তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য সরকারের কতই দুশ্চিন্তা, তাদের পড়াশুনা করার জন্য তরুনের স্বপ্ন প্রকল্প চালু করে দিয়েছে। ভালো কথা, কিন্তু মফস্বল শহর, বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সিস্টেমটাই তো অত্যন্ত দুর্বল। তাহলে তারা পড়াশুনার জন্য অনলাইন সুবিধা পেতে পারবে কি ভাবে? বহু অভিভাবক ছাত্র ছাত্রীদের হাতে মোবাইল দেয়ার এই ব্যবস্থা কোনো ভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না। বলছেন, এমনিতেই রাজ্যে হু হু করে বেকারদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে তো রাস্তায় চাকরির দাবিতে আন্দোলনে বসে থাকতে হবে, ভবিষ্যত তো অন্ধকারেই। এর উপর মোবাইল আশক্তি করে দিয়ে সুস্থ মনকে অসুস্থ করে না তুললেই নয়!

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.