Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তদন্তে আশা কর্মীদের নিয়োগ করে রাজ্য সরকার কার্যত তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আশা কর্মীদের কাজ মুলত প্রসুতি মা, সন্তানের জন্ম সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে। স্বল্প বেতনে প্রায় ২৪ ঘন্টা সজাগ থাকতে হয় এবং সংবাদ পাওয়া মাত্রই গর্ভবতী মাকে নিয়ে হাসপাতাল মুখী হতে হয়। আশা কর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে এই কাজ করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি কারা পাওয়ার যোগ্য, এরজন্য সরকার কি কি শর্ত আরোপ করেছে, সেগুলো ঠিকঠাক মেনে উপভোক্তা বাড়ি পেয়েছেন কিনা, বা পাবেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে এতগুলো বছর ধরে পঞ্চায়েত, পৌরসভাগতভাবে নির্বাচিত সদস্যরা কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের ভুমিকাই বা কি ছিল, রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে প্রকৃত অর্থে প্রয়োজন এমন মানুষজন বাড়ি পেয়েছেন কিনা বা নামের তালিকায় স্থান পেয়েছেন কিনা সে সব নিয়ে সঠিক তথ্য প্রমাণ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে না দেয়া পর্যন্ত আটকে গেছিলো টাকা। এতদিন পর যখন আবাস যোজনার বাড়ির জন্য‌ আটকে থাকা বরাদ্দ অর্থ পেতে সঠিক হিসাব পেশের প্রয়োজন হলো তখন সেই তদন্তের ভার রাজ্য সরকার প্রশাসনিক আধিকারিকদের না দিয়ে কাদের কাঁধে ন্যাস্ত করলো? আশা কর্মীদের। যাদের এই বিষয়ে না আছে প্রশিক্ষণ, না আছে উপযুক্ত নিরাপত্তা। তাঁরা এলাকারই গৃহবধূ বা মেয়ে। এলাকায় তাদের বসবাস করতে হবে। কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে শাসকদলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, পৌরসভার কাউন্সিলর, শাসকদলের নেতাদের ডিঙিয়ে কোন আশা কর্মী বলবেন এর পাওয়া উচিত ছিল,ওর পাওয়া টা অবৈধ পথে, পাড়ার আশা কর্মী মহিলাটিকে সেই এলাকায় বাস করতে হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নামের তালিকা সংযোজন, সংকোচন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মুখে যতটা বলা যায়, বাস্তব যে ততটা সহজ নয় তার প্রমাণ রাজ্য জুড়ে আশা কর্মীদের ডেপুটেশন, বিক্ষোভ কর্মসূচি, আরও প্রমাণ, ইতিমধ্যেই কেউবা না খেয়ে থাকবেন তবু চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাঁচতে চাইছেন, কেউবা মৃত্যুকে বাঁচার পথ মনে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।‌ সাধারন মানুষের প্রশ্ন, কি প্রয়োজন ছিল আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীদের এভাবে বলির পাঁঠা বানানোর। বড়ো বড়ো সরকারি দপ্তরের বিল্ডিংকে ফাঁকা রেখে, বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে যদি খোদ সরকারি কর্মীদের সাথে নিয়ে আধিকারিকরা দপ্তরগুলোকেই দুয়ারে দুয়ারে পাঠিয়ে দেন, তাহলে উক্ত আধিকারিকদেরই দায়িত্ব দেয়া হোকনা আবাস যোজনার বাড়ির তদন্তের দায়ভার নিতে? এই তো ঝুলি থেকে একেরপর বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, বড়ো বড়ো প্রাসাদের মতো বাড়ির মালিক শুধু মাত্র শাসকদলের হেভিওয়েট হওয়ায় এক বা একাধিক আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন বা তালিকায় স্থান পেয়েছেন, অথচ সেই এলাকাতেই সত্যিকার অর্থেই মাথার উপর ছাদ প্রয়োজন আছে অথচ শাসকদলের নাপসন্দ তাই তালিকায় স্থান পাননি। কোনো কোনো পরিবার বাড়ির গ্যারেজ দেখিয়ে, একটিই মাটির বাড়িকে বাড়ির সব কটি ভাই দেখিয়ে দিয়ে বাড়ি পেয়ে গেছেন বা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, এমন বহু উদাহরণ মিডিয়ার দৌলতে সামনে আসছে। নিজস্ব জায়গা নেই, দলিল, পড়চা কিছুই নেই, অন্যের জায়গা দখল করে অথবা সরকারি জায়গায় বসবাস করেও বাড়ি পেয়েছেন এমন উদাহরণ অসংখ্য। কিন্তু আশা কর্মীদের কার ঘাড়ে কটা মাথা যে সেই চিত্র তুলে ধরবেন? রাজ্য জুড়ে আশা কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে আছেন, তাঁদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, যদি পুলিশি নিরাপত্তা দেয়াও হয়, কদিন দেয়া হবে? তদন্তের শেষে? আজীবন? দিনের শেষে আশা কর্মীদের তাঁদের এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াই বসবাস করতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে কেন এভাবে অসহায় আশা কর্মীদের চরম বিপদের মুখে ঠেলে দিলো রাজ্য সরকার।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.