Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

নিজস্ব সংবাদদাতা:আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কি রুগীদের জন্য আদৌ নিরাপদ? ভর্তি থাকা অবস্থায় নিখোঁজ উত্তম ঘোষের মৃত দেহ উদ্ধার হয়েছে গোঘাট থানার খাটুলের কাছে। এমনকি অভিযোগ, আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার কাতর আবেদন করেও কোনো সহযোগিতা পাননি মৃতের স্ত্রী। যদি সকালেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে হয়তো এতদুর পৌঁছানোর আগেই উত্তম ঘোষকে উদ্ধার করা যেতো এবং বেঘোরে প্রাণ হারাতে হতো না। মৃতের ভাই সুরজিৎ ঘোষ জানান, বৌদি ও দিদি হাসপাতাল থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তিনি চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করে নিজে কয়েকজনকে নিয়ে হাসপাতালে যান এবং সুপারের অনুপস্থিতিতে এসিস্ট্যান্ট সুপারের সাথে কথা বলেন। এসিস্ট্যান্ট সুপার নাকি থানায় জানানো হয়েছে বলে দায় সেরে দেন। সুরজিৎ ঘোষ জানান, হাসপাতালের সিসি ফুটেজ থেকে নাকি দেখা গেছে হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে উত্তম ঘোষকে চলে যেতে দেখেছেন বৌদি। তাঁর অভিযোগ, যদি তাই হয় তাহলে একজন রুগী হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে অবলীলায় চলে গেল অথচ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে যারা থাকেন তারা কোথায় ছিলেন? কেন গুরুত্বপূর্ণ একটা দপ্তরের দরজা সুরক্ষিত নয়? বৌদি যখন সনাক্ত করে ছিলেন তখনই কেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি? দাদার কাছে কোনো অর্থ ছিলো না, তার পক্ষে সম্ভব নয় বাস বা অন্য কোনো যানবাহনে করে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে খাটুলের মল্লিক বাজার পর্যন্ত যাওয়া। তিনি পায়ে হেঁটেই নিশ্চিত গেছেন। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে সব থানাতেই জানানো হতো। এতটা পথ যাওয়ার আগেই উত্তম ঘোষকে পথেই পুলিশ সনাক্ত করতে পারতেন। সুরজিৎ ঘোষ জানান, তাঁরা নিজেরাই দাদার সন্ধান চেয়ে লিফলেট বিলি করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। তাঁরা দরীদ্র সাধারণ পরিবারের বলেই কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এভাবে দায় এড়িয়ে গেছেন! প্রথমে তো তাঁরা বৌদি অসহায়ের মতো ছুটে গেলে এ দরজায় ঐ দরজায় ছুটিয়েছেন। পাত্তাই দেননি, সময় অনেকটা গড়িয়ে যাবার পর তারা জানিয়েছেন পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে, মানে? ভোরে যে মানুষটা ভর্তি থাকা অবস্থায় বেড থেকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তার বিষয়ে পুলিশকে কেন সাথে সাথেই জানানো হবে না? তিনি জানান, আজ শনিবার গোঘাট থানার পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় এ থানার খাটুল মল্লিক বাজারে অচৈতন্য অবস্থায় দাদাকে পাওয়া যায়, সম্ভবত কামারপুকুর হাসপাতালে চিকিৎসক দাদাকে মৃত ঘোষণা করেন, দাদার বডি গোঘাট থানায় আছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমনিতেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে, এটা নাকি যমালয়, এখানে নাকি চিকিৎসা পরিসেবা অত্যন্ত নিম্নমানের। খাবার এতটাই অপুষ্টিকর ও জঘন্য স্বাদের যে খুব অসহায় হয়ে না পড়লে কেউ মুখে দিতেও চায়না। এখন দেখা যাচ্ছে রুগীদের নিরাপত্তাও নেই। রুগীরা এখানে সুরক্ষিত নয়। যে কারণে আজ তার দাদা প্রথমে নিখোঁজ পরে বহু দূরে তার অসহায় মৃত্যু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। এর জন্য তিনি আইনের পথে যা যা করার করবেন বলেও জানান। এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরামবাগ বিধায়ক মধুসূদন বাগ ও দলীয় কর্মীরা আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যান এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি জানান, সুপার আউট অফ স্টেশন, তিনি এখানে নেই। তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন। হাসপাতালে সেদিন যারা যারা ডিউটিতে ছিলেন, যে সমস্ত সিকিউরিটি পার্সোনাল এর সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের অবিলম্বে সাসপেন্ড করার দাবি জানাবেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাবেন যাতে আগামী দিনে আর এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ না হয়। তিনি বলেন, এই গাফিলতি কার, যেখানে একটি রুগী ভোর পাঁচটা পনেরো নাগাদ তার বেড থেকে নিখোঁজ হচ্ছে, আর গেট খোলা হয় ছটায়, কি ভাবে এটা সম্ভব হলো? কেন বারেবারে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে খাবারে দূর্নীতি, অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার, এক্সরে মেশিন খারাপ, এক্সরে প্লেট নেই, ওষুধ নেই, রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতির অপদার্থতা, তার অপসারণ চাই আমরা। এখানে মানুষ আসেন জীবন বাঁচানোর জন্য, রুগীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করার জন্য নয়। বারবার জানিয়েছেন এরপরও যদি কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকে তাহলে তাঁরা তীব্র আন্দোলনের পথে এগোবেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.